পরী যখন বউ

 গল্প :- পরী বউ

পর্ব :- ০১

লেখা :- কাব্য আহম্মেদ



আচ্ছা এই বাড়িওয়ালারা নিজেদের কি মনে করে তা

কে জানে? ব্যাচেলররা কি মানুষ না? নাকি এলিয়েন?

যে এদের বাড়ি ভাড়া দেয়া যাবে না। ব্যাচেলরদের

বাড়ি ভাড়া দিলে কি ওদের বাড়ি জাহান্নাম বানাই

ফেলবে? নাকি ব্যাচেলর ছেলেরা বাড়ি ভাড়া নিতে

আসে এদের মেয়েদের সাথে প্রেম

করতে? এতোই যখন ভয় তাহলে বাড়ি ভাড়া দিতে চাই

কি জন্য? আর ব্যাচেলরদের কাছে যদি বাড়ি ভাড়া না

দেয় তাহলে আমরা কোথায় যাবো? বাড়ি ভাড়া নিতে

আসলেই আগে শুনবে ব্যাচেলর কিনা। মনে হয়

একটা বউ থাকা আবশ্যক অসহ্য। বউ যেনো একটা

বিরাট সার্টিফিকেট। এটা না হলে নয়। এদিকে নিজেই

খাইতে পরতে পারিনা ঠিকমত। তার উপরে যদি একটা

বউ নামক প্যারা ঘাড়ে আসে তাহলে তো

একেবারেই শেষ। জীবনটা তেজপাতা বানাই

ফেলবে। এমন যদি হতো যে বউ থাকলে বাড়ি ভাড়া

ফিপটি পারসেন্ট নিতো কিন্তু তা নিবে না। একটা

পয়সাও কম নিবে না। যাইহোক এতো কষ্টে যে

বাড়িটা ভাড়া পাইছি এজন্য আলহামদুল্লিহ। বাড়িটা ভাড়া পাইছি

কিন্তু ব্যাচেলর বলে যে ভাড়া তার থেকেও

বেশি। কিন্তু কি আর করা? উপায় ছিলো না। বাড়ি তো

পাওয়াই যাই না। তাই বেশি হলেও এটাকে হাত ছাড়া

করলাম না। আজকের মধ্যে একটা বাসা খুব দরকার

ছিলো। নয়তো কি যে হতো আল্লাহ জানে।

বাড়িটা ভাড়া নিতে পেরে যেনো এভারেষ্ট জয়

করার মত আনন্দ হচ্ছে। সেই দুপুর থেকে রুমটা

গোছাচ্ছি। মাত্র শেষ হলো কিন্তু বিকাল হয়ে

গেছে গোছাতে গোছাতে। ঐ বাসা থেকে

জিনিস পত্র আনা তারপর এই রুমে এনে গোছানো

উফফ! কি ঝামেলার একটা কাজ। ভাল্লাগেনা এতো

বাসা পাল্টাতে। পাল্টাতে চাইছিলামও না কিন্তু না পাল্টালে

উপায় ছিলো না যার কারনে পাল্টাতেই হলো। যাই

এখন একটু ফ্রেশ হয়ে ঘুমাবো। অনেক ক্লান্ত

লাগছে। তারপর ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড়লাম। কখন

যে ঘুমিয়ে গেছি টেরই পাইনি। যখন ঘুম ভাঙলো

দেখলাম সন্ধ্যা হয়ে গেছে। তাড়াতাড়ি করে উঠে

ফ্রেশ হয়ে এক কাপ চা বানালাম। আপাতত চা খেয়েই

থাকতে হবে। কারন রান্না বান্না করা হয়নি এখনো।

রাতের খাবারটা রেষ্টুরেন্ট থেকেই খেয়ে

আসতে হবে তারপর কাল থেকে নিজেই রান্না

বান্না করে নিবো। হুম চা বানানো শেষ। চা টা হাতে

নিয়ে রুম থেকে বের হলাম। আমার রুমটা ছাদের

উপর হওয়াতে অনেক ভালো হয়েছে। যখন খুশি

ছাদে হাটা চলা করা যাবে। আগে যে বাসাতে থাকতাম

সেখানে ছাদে এক প্রকার উঠতেই দিতো না। শুধু

জামা কাপড় গুলো শুকানোর জন্য একটু যেতে

দিতো কিন্তু তাও বাড়িওয়ালার কাছ থেকে চাবি এনে

তারপর ছাদে যেতে হতো। এখানে অবশ্য সেই

ঝামেলাটা নেই। ভাবতে ভাবতে চায়ে চুমুক দিলাম।

বাহ! চা টা তো দারুন হইছে। তারপর ছাদটা ঘুরে ঘুরে

দেখতে লাগলাম। ছাদটা অনেক বড় আর অনেক

সুন্দর। এক পাশে বেশ বড় করে একটা ফুলের

বাগান। অনেক রকমের ফুল ফুটেছে তাতে।

দেখতে বেশ সুন্দর লাগছে। সেই ফুলের সৌরভ

চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। অনেক রকমের ফুল

কিন্তু গোলাপ ছাড়া আর একটাও চিনলাম না। ছাদের

অন্য পাশের ধার দিয়ে অনেক রকমের ফল গাছ

আরো কি কি গাছ যেনো লাগানো আছে, তাও

চিনলাম না। আকাশে আজকে চাঁদ নেই তবুও হালকা

জোৎস্না আছে। আর আকাশে ছড়ানো আছে

মুঠো মুঠো তারা। সব মিলিয়ে দারুন একটা পরিবেশ।

হাতের চা কখন শেষ হলো বুঝতেই পারলাম না।

তারপর ওখানে দাড়িয়ে কেটে গেলো অনেকটা

সময়। নাহ এখন আর এই সুন্দর পরিবেশটাও আর

সুন্দর লাগছে না আমার কাছে। তার কারন অনেক খিদা

লেগেছে। খাইছি সেই দুপুরের আগে। আর

খাওয়ার সময় হয়নি। পেটের ভিতর এখন হাতুড়ি

পিটাচ্ছে। খিদা লাগলে সুন্দর জিনিস কেও সুন্দর

লাগেনা। অসহ্য লাগে সব কিছু। এজন্য হয়তো

লোকে বলে পেট শান্তি থাকলে দুনিয়া শান্তি।

এখন হোটেলে যেয়ে পেট পুজাটা সারতে

হবে। কিন্তু ইচ্ছাই করতেছে না এখন হোটেলে

যেয়ে খাইতে। বাড়িতে থাকলে কত ভালো

হইতো। যখন ইচ্ছা তখন মায়ের হাতের রান্না খাওয়া

যাইতো। কিন্তু এখনে তো আর তা হবে না। কি

আর করা? যাইতে হবে সেই হোটেলে। সারা রাত

তো আর না খেয়ে থাকা যাবে না। চায়ের কাপটা

হাতে নিয়ে রুমে দিকে হাটতে লাগলাম। রুমে

ঢুকেই জোরে একটা চিৎকার দিয়ে উঠলাম। ঠিক

তখনই ও আমার হাতটা ধরে বিছানার উপর বসালো আর

একটা হাত দিয়ে আমার মুখ চেপে ধরলো।

যেনো চিৎকার করতে না পারি। তারপর বললো

- তুমি আমাকে দেখে ভূত দেখার মত এমন চিৎকার

দিয়ে উঠলে কেনো? আমাকে দেখে কি

তোমার ভূত পেত্নীর মত লাগে?

কিছু বলতে পারলাম না। কি বলবো? মাথায় কিছু

আসতেছে না। মাথাটা ভারি ভারি লাগতেছে। তারপর ও

কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনই দরজায় ঠকঠক শব্দ

হলো।

তখন ও বললো

- দেখো দরজায় কে যে এসেছে। কি বলে

শুনে এসো।

আমি হুম বলে দরজার কাছে চলে গেলাম। দরজা

খুলে দেখি বাড়িওয়ালা হাজির। হয়তো আমার চিৎকার

শুনেই এসেছে।

- কি হইছে বাবা? এতো জোরে চিৎকার করে

উঠলে কেনো? বললো বাড়িওয়ালা।

কি বলবো বুঝতে পারছি না। আচমকা চিৎকার দেওয়াটা

আমার মোটেই ঠিক হয়নি। কিন্তু কি বা করবো হঠাৎই

ওকে আমার রুমে দেখেই চিৎকারটা বেরিয়ে

এলো। আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে

বাড়িওয়ালা আবার বললো।

কি হলো বাবা চুপ করে আছো কেনো?

কোনো সমস্যা হলে আমাকে বলতে পারো।

আমি কি বলবো এখন? ওর কথা তো বাড়িওয়ালাকে

বলা যাবে না। আমি বললাম।

- কিছু না আংকেল। আসলে রুমটা গোছাতে যেয়ে

আচমকা একটা তেলাপোকা উড়ে এসে গায়ের

উপর পড়লো। আর তাতেই ভয় পেয়ে চিৎকার

দিয়ে ফেলেছি।

- পুরুষ মানুষ তেলাপোকা দেখে ভয় পাইতে হয়?

আমি তো ভাবলাম কি না কি বিপদ হলো আর তাই ছুটে

চলে আসলাম। বললো বাড়িওয়ালা।

আসলে বাড়িওয়ালার কথা শুনে আরো অনেক

লজ্জ্বার ভিতর পড়ে গেলাম। আর কিইবা বলতাম

বাড়িওয়ালাকে। অন্য কিছু বলতে গেলে আরো

বানিয়ে অনেক মিথ্যা বলতে হতো আমাকে।

আমি বললাম,

- আসলে আংকেল হঠাৎই এসে পড়লো তো তাই

আর কি।

- হুম বুঝতে পারছি। আচমকা কিছু হলে এমনই হয়।

আর তাছাড়া এই রুমটা অনেক দিন ধরে বন্ধ ছিলো

তাই হয়তো তেলাপোকা এসেছে এখানে। তুমি

একটু ভালো করে পরিষ্কার পরিছন্ন করে নিও।

- জি আংকেল নিবো। বললাম আমি।

- তাহলে আমি যাই বাবা। আর হ্যাঁ কোনো সমস্যা

হলে আমাকে অবশ্যই জানাবে কেমন?

- জি আংকেল জানাবো।

বাড়িওয়ালাকে বিদায় দিয়ে দরজা লক করে বিছানায়

কাছে আসলাম। দেখলাম ও বসে বসে মিটমিট করে

হাঁসছে।

আমাকে দেখে বললো,

- তুমি বাড়িওয়ালাকে মিথ্যা বললে কেনো?

- তাছাড়া কি বলবো আমি? তোমার কথা বলবো?

বললাম আমি।

- না তা না। তুমি যে তেলাপোকা দেখে ভয়

পাইছো এটা শুনে আমার খুব হাসি পাচ্ছে। আর

তোমার ঐ বোকা বোকা চেহারা দেখে বেশি

হাসি পাচ্ছে আমার হিহিহিহি

কিছুই বললাম না আমি চুপ করে থাকলাম। এতো কষ্ট

করে বাড়ি খুজে বের করা। তারপর ঐ বাড়ি থেকে

জিনিস পত্র এই বাড়িতে নিয়ে আসা। সব কষ্টই

বিফলে চলে গেলো আমার। যার জন্য বাড়ি পাল্টালাম

সেই এসে হাজির। বাড়িটা ভাড়া নেয়ার পর অনেক

আনন্দ হচ্ছিলো। এখন সব শেষ।

ও বললো,

- এমন পেঁচার মত মুখ করে আছো কেনো?

আমি বললাম,

- এমনি ভালো লাগছে না তাই। আচ্ছা তার আগে

বলো তো তুমি এই বাড়ির খোজ কিভাবে

পেলে?

আমার কথা শুনে ও আবারও মুচকি হাসলো তারপর

বললো,

- এটা খুজে বের করা আমার কাছে কোনো

ব্যাপারই না। শুধু বাড়ি কেনো? তুমি যদি আমাকে

লুকিয়ে এই শহর, এই দেশটাও ছেড়ে চলে যাও।

তবুও আমি তোমাকে খুজে বের করবো।

- কিন্তু কেনো? কি চাও আমার কাছে?

ও একটু রেগে গেলো আমার কথাটাই। তারপর

বললো,

- এক কথা তোমাকে আর কয়বার বললো সিয়াম?

আমি তোমাকে ভালোবাসি অনেক বেশি

ভালোবাসি। তোমাকে ছাড়া আমি কিছুই ভাবতে পারিনা।

আমি তোমাকে হারাতে চাইনা আর হারতে দিবোও

না।

বুঝতে পারছি অনেকটা রেগে গেছে ও। তবুও

বললাম,

- কিন্তু আমি তো তোমাকে ভালোবাসি না। আমি

ভালোবাসতে পারছিও না তোমাকে। প্লিজ আমাকে

ছেড়ে দাও?

ও বললো,

- না সিয়াম এটা সম্ভব না। আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবো

না। আমি মরে যাবো। অনেক বেশি ভালোবাসি

তোমাকে। 

.

.

.

চলবে........

No comments

Powered by Blogger.