তোমার পিছু ছাড়বো না পার্ট -৩
গল্পঃ #তোমার_পিছু_ছাড়বো_না
লেখকঃ #রাজু
পার্টঃ #৩
আসমাঃ রাস্তার মাঝে এইসব কি করছেন।আর আপনাকে না গতকাল বলে দিয়েছি,আমি আপনাকে ভালোবাসি না।(হাত থেকে ফুল গুলো নিয়ে দূরে ফেলে দিলো)
✪✪✪✪✪✪ ২য় পর্বের পর থেকে ✪✪✪✪✪✪✪
ফুল গুলো ফেলে দেওয়াতে আমার খারাপ লাগেনি,বলতে পারেন ভালো লেগেছে।তার কারণ,আসমা অন্তত আমার কাছ থেকে কিছু নিয়ে তো ছিলো।এখন আমার কাছে এইটুকুই পাহাড় সমান।হতে পারে আজ ফেলে দিয়েছে অন্য কোনো একদিন বুকে জরিয়ে নিবে।তারপর আগ পর্যন্ত আমার কথা একটাই তা হলো, #তোমার_পিছু_ছাড়বো_না।
আসমাঃ এখনো হাঁটু গেড়ে বসে আছেন কেন।উঠে দাঁড়ান বলছি।(চোখ রাঙিয়ে)
আমিঃ রাগলে তোমাকে আরো বেশি সুন্দর লাগে।(উঠে দাঁড়িয়ে,মুচকি হাসি দিয়ে)
আসমাঃ আপনাকে না বলেছি আমাকে তুমি করে না বলতে।
আমিঃ শুনো আমি সবাইকে আপন ভেবে তুমি করে ডাকি।আমার জানা মতে মুরব্বিদের ছাড়া কাউকে আপনি করে ডাকি না।আর ভুলে যাবে না আমি কিন্তু তোমার সিনিয়র। তাই নিয়ম অনুযায়ী আমি তোমাকে তুমি করে ডাকবো।চাইলে তুমিও আমাকে তুমি করে ডাকতে পারো তাহলে খুশি হবো।
আসমাঃ আপনার খুশির গুল্লি মারি।আচ্ছা আপনি তো বড় বেহায়া টাইপের লোক।কথায় কথায় আপনে অপমান করছি তারপরও আমার সামনে দাড়িয়ে আছেন?(বিরক্ত ভাব দেখিয়ে)
আমিঃ বললাম না প্রথম দেখায় ভালোবেসে ফেলেছি।এখন তোমাকে নিজের করে পাওয়ার জন্য সাত সমুদ্র তেরো নদীও পাড়ি দিতে পারবো।তবে তাও জানি প্রথম প্রথম একটু অপমান করবে, কিন্তু এমন এক সময় আসবে যখন তুমি নিজের থেকে আমাকে বেশি ভালোবাসবে।
আসমাঃ এইসব বাংলা ছবির ডায়লগ এবং দিনের বেলায় সপ্ন দেখা বাদ দেন।
আমিঃ যখন আমার প্রেম পড়বে,তখন সবকিছু সপ্নের মতোই মনে হবে তোমার দেখে নিও।যেমনঃ সব সময় আমাকে নিয়ে.......(সম্পুর্ন কথা বলতে না দিয়ে)
আসমাঃ আপনি থাকেন এখানে,আর দাড়িয়ে দাড়িয়ে সপ্ন দেখেন।আমার বাসায় যেতে হবে দেরি হয়ে যাচ্ছে।
আবার হাঁটতে শুরু করে আসমা।আমিও দাড়িয়ে না থেকে আবার আসমার কাছে গেলাম।
আমিঃ আসমা আইসক্রিম খাবে?
আসমাঃ ঐ মিয়া,আপনার সাহস তো কম না আগে তুমি করে ডেকেছেন এখন আবার আমার নাম ধরে ডাকছেন?
আমিঃ তুমি আমাকে ঐ মিয়া বলে ডাকছো কেন?তোমার যেমন সুন্দর নাম আছে তেমনি আমারও একটা সুন্দর নাম আমার আম্মু রেখেছে বুঝেছো। যাহ! তোমাকে তো আমার নামটাই বলা হলো না। আমি আযহারুল ইসলাম রাজু সবাই রাজু বলে ডাকে,নাম তো মনে হয় শুনেছোই।(ভাব নিয়ে)
আসমাঃ যেই ভাব দেখাচ্ছে,মনে হচ্ছে কোন না কেন সেলেব্রিটি আমার সামনে দাড়িয়ে আছে।
আমিঃ থাক আমার এতো প্রশংসা করতে হবে না।এখন বলো কি খাবে,কারণ দুপুরের এই রোদে আমার আবার আইসক্রিম খেতে ভালো লাগে।তাই তোমাকে জিজ্ঞেস করেছিলা আইসক্রিম খাবে নাকি?
আসমাঃ আপনার তো দেখি মেয়েদের মতো স্বভাব।
আমিঃ আচ্ছা বলতো কোথায় লেখা আছে।দুপুরের গরমে ছেলেরা আইসক্রিম খেতে পারবে না শুধু মেয়েরাই খেতে পারবে?এখন বলো তুমি খাবে কি না।
আসমাঃ আমি অপরিচিত কারো কাছ থেকে কিছু খেতে পছন্দ করি না।
আমিঃ এখানে অপরিচিত হওয়ার কি আছে,আমি তোমাকে আজ নিয়ে ৩৮ দিন ধরে চিনি...(আমাকে থামিয়ে)
আসমাঃ কিন্তু আমি তো আপনাকে মাত্র ২দিন ধরে চিনি।আর এখন যেই দিন কাল পরেছে ছেলেদের উপর কোনো বিশ্বাস নেই কখন কি করে বসে।আর আপনাকে তো আমি একদমই বিশ্বাস করি না।
আমিঃ থাক আর বলতে হবে না।তুমি না খেতে চাইলে আমি বরং একা একা খাই।
তারপর আসমা হাঁটতে থাকে আমি গিয়ে দোকান থেকে ২টি কোণ আইসক্রিম নিয়ে আসলাম।
আমিঃ একটু আস্তে আস্তে হাঁটো না।এই নাও একটা আইসক্রিম ধরো।(আসমার হাতে একটি আইসক্রিম ধরিয়ে দিয়ে)
আসমাঃ বললাম তো আমি খাবো না।
আমার হতে থাকা আইসক্রিমটা প্রথমে ছিঁড়ে নিমাল।তারপর আসমার হাত থেকে অপর আইসক্রিমটা নিয়ে ছেঁড়া আইসক্রিমটা দিলাম এবং এটাও ছিঁড়ে নিলাম।এখন আসমার কাছে একটা আর আমার কাছে একটা।
তারপর আসমার কাছ থেকে আইসক্রিমটা নিয়ে।দু-হাতে দুটো আইসক্রিম নিয়ে একসাথে খেতে লাগলাম।আমার কান্ডকারখানা দেখে আসমা অভাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
আসমাঃ এটা কি হলো!?
আমিঃ তুমি না বললে খাবে না।তাই ভাবলাম আমিই খেয়ে নেই।
আসমাঃ তাহলে আমার হাতে কেন দিয়েছিলেন?
আমিঃ এক সাথে দুটো আইসক্রিম ছিঁড়তে পারবো না তাই দিয়েছিলাম।(একটা হাসি দিয়ে)
আসমা আর কিছু না বলে হাঁটতে।আমিও আর কোনো কথা না বলে আসমার সাথে হাঁটতে থাকি।আসমার চেহারাটা এখন দেখার মতো হয়ে আছে।বেচারি মনে করেছিলো দুজনের জন্য দুটো আইসক্রিম এনেছিলাম হা.হা.হা.হা.
আসমাঃ ঐ আপনি আর আমার পিছনে পিছনে আসবেন না।আপনার কি কোনো কাজ কাম নেই।
আমিঃ এখন আমি আমার কাজেই আছি।
আসমাঃ দেখেন এখন আমার বাসার কাছে চলে এসেছি,প্লিজ আমাকে ফলো করা বন্ধ করেন না হলে কিন্তু পুলিশের কাছে আপনার নামে কমপ্লেন করবো।
আমিঃ শুনো এই রাজু কোনো পুলিশকে ভয় পায় না বুঝলে।আর পুলিশ আসলে বলবো আমি আমার হবু বউয়ের সাথে থাকলে তাদের কি প্রবলেম হুম।
আসমাঃ কে আপনার হবু বউ?(চোখ রাঙিয়ে)
আমিঃ কে আবার, তুমি।
আসমাঃ সত্যি সত্যি বলছি,আর ১ মিনিট যদি আপনি আমার সামনে দাড়িয়ে থাকেন না।তাহলে আজ এখানেই আপনার গেম ওভার করে দিবো।(দাঁতে দাঁত খিঁচিয়ে)
আমিঃ আহ্ রাগি মোডে তোমাকে যে কি দেখাচ্ছে না।এক কথায় অসাধারণ।
আসমাঃ আপনি যাবেন এখন?
আমিঃ যাচ্ছি তো,তবে যাওয়ার আগে আবার বলে যাচ্ছি I LOVE YOU.
আসমার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে সোজা বাড়িতে চলে আসলাম।বাসায় কলিংবেল বাজালে আম্মু এসে দরজা খুলে দেয়।
আম্মুঃ আজ আসতে এতো দেরি করলি কেন?
আমিঃ আর বলো না তো,ছুটির পর প্রিন্সিপাল স্যারের ডাক পরলো।তারপর স্যারের কাছে গেলাম,স্যার বললো আগামী মাসে আমাদের ভার্সিটিতে যেই অনুষ্ঠান আয়োজিত হবে তার সবকিছু আমার খেয়াল রাখতে হবে।তাই সবকিছু বুঝে আসতে আসতে দেরি হয়ে যায়।
আম্মুঃ আহারে আমার ছেলেটা কতো কাজ করে এসেছে।আয় বাবা ঘরে আয়।
বুঝলাম না,এতো ভালো এক্টিং কবে শিখলাম।কি আর করবো বলেন শুনেছি প্রেমে পড়লে মানুষ কতো কি করে।তাই হয়তো আমারও এমন হচ্ছে।তবে ভালোই হয়েছে কথা ঘুরিয়ে আসতে পেরেছি না হলে আম্মুর নানা কথার উত্তর দিতে হতো।
ফ্রেশ হয়ে এসে,আম্মু আর আমি একসাথে খাওয়া দাওয়া করলাম।তারপর রুমে চলে আসলাম রেস্ট নিতে এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমিয়ে যাই।
সন্ধ্যার দিকে ঘুম থেকে উঠলাম।ফ্রেশ হয়ে আমাদের আড্ডা খানা চায়ের দোকানে চলে আসলাম। এসে দেখি নাইম ও সিয়াম আগে থেকেই বসে আছে কিন্তু আজও পলাশের কোনো খবর নেই।
আমিঃ কি অবস্থা তোদের?
সিয়ামঃ আমাদের কথা বাদ দে, আগে বল ভাবি সাথে আজ কথা হয়েছে কি না?
আমিঃ হুমমম,হয়েছে।
নাইমঃ কি কি হলো বল।
আমিঃ আগে বল পলাশ কোথায়?
সিয়ামঃ মনে হয় কিছুক্ষণ পর আসবে।
আমিঃ বলতো পলাশ প্রতি দিন এভাবে ঘন্টাখানেক দেরি করে আসে কেন?তোরা কি কিছু জানিস নাকি?
সিয়ামঃ ঠিক বলেছিস এই ব্যাপারটা আমিও কিছুদিন ধরে লক্ষ করেছি।
নাইমঃ এক কাজ করি,চল এখন আমরা পলাশের বাড়ির দিক থেকে ঘুরে আসি।হতে পারে যেনেও যেতে পারি কিসের জন্য পলাশ প্রতিদিন এমন লেট করে।
আমিঃ গুড আইডিয়া।তাহলে আর দেরি না করে এখনই যাওয়া যাক।
আর বসে না থেকে নাইম,সিয়াম আর আমি পলাশের বাড়ির দিকে রওনা দিলাম।সন্ধ্যার দিকে ৩ বন্ধু মিলে হাঁটতে অবশ্য মন্দ লাগছে না বরং ভালোই লাগছে।
পলাশের বাড়ি বেশি দূরে না হওয়ায় কিছুক্ষণের মধ্যেই বাড়ির সমানে চলে আসি।
সিয়ামঃ তোরা লুকিয়ে পড় ঐদেক পলাশ বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসছে।(আমরা গিয়ে একটা দোকানে পিছনে লুকিয়ে পরলাম)
নাইমঃ ঐ আমরা কি চোর নাকি,যে পলাশকে দেখে লুকিয়ে পড়তে হবে।
আমিঃ ঠিকি তো,চল গিয়ে পলাশের সাথে দেখা করি।
আবার দোকানের পিছন থেকে বেরিয়ে আসি।কিন্তু পলাশ আমাদের দিকে না এসে তার বিপরীত দিকে যাচ্ছে।
আমিঃ পলাশ এই দিকে না এসে ঐ রাস্তা দিয়ে কোথায় যাচ্ছেরে।
নাইমঃ আমরা জানলে কি আর এখনে আসতাম নাকি।
সিয়ামঃ এর জন্যই তোদের লুকাতে বলেছিলাম,যা থেকে পলাশ যেন জানতে না পারে আমরা ওরে ফলো করছি?
আমিঃ এখন এতোকিছু না ভেবে চল পলাশের পিছনে পিছনে যাই।তাহলেই সব সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।
নাইমঃ একবার ভেবে দেখেছিস পলাশ কিন্তু আমাদের বেস্ট ফ্রেন্ড।পরে যদি জানতে পারে আমরা লুকিয়ে লুকিয়ে ওরে ফলো করেছি। তাহলে কিন্তু পলাশ মাইন্ড করতে পারে।
আমিঃ এখন এতদূর পর্যন্ত না ভেবে চল দেখি পলাশ আসলে করে কি।
বেশি কথা না বলে আবার পলাশকে ফলো করতে লাগলাম।আর পলাশও থামার কোনো নাম নেই।বুঝি না হাঁটতে হাঁটতে কই চলে যাচ্ছে।প্রায় ১৫ মিনিট পর,একটা বাড়ির নিচে গিয়ে দাঁড়ালো।
আমারও দূর থেকে দেখতে লাগলাম কি কি হচ্ছে।লক্ষ করলাম পলাশের কাছে একটি মেয়ে আসলো এবং দু'জন হাতে হাত রেখে হাঁটতে লাগলো।
সিয়ামঃ দেখেছিস শালা পলাইশা তলে তলে টেম্পো চালাচ্ছে।আর আমাদের কিছুই বললো না।
আমিঃ আমার প্রথমেই সন্দেহ হয়েছিল,যার জন্য ফলো করতে করতে এখানে আসা হলো।এখন চল দেখি আবার কোথায় যায়।
নাইমঃ হুমম,চল।
আবার পলাশকে ফলো করতে লাগলাম,তারপর পলাশ আর মেয়েটা একটি ফুসকার দোকানে গিয়ে দাঁড়ালো।যে দেখে বুঝলাম মনে হয় দুই প্লেট ফুসকা অডার দিয়েছে দুজনের জন্য।
আমিঃ সিয়াম পলাশের নাম্বারে একটা ফোনদে তো।
সিয়ামঃ কেন?আর আমার মোবাইলে টাকা নেই।
আমিঃ শালা ফকির।
তারপর আমার মোবাইল দিয়ে পলাশকে ফোন দিলাম।প্রথমে রিং হতে হতে বন্ধ হয়ে যায়।আবার ফোন দিলাম,দেখলাম মেয়েটি পলাশকে কি যেন বললো তারপর পলাশ আমার ফোন রিসিভ করলো।আমি তো পলাশের কর্মকান্ড দেখে শিহরিত।শালা মেয়ের কথায় আমার ফোন রিসিভ করলো।
আমিঃ হ্যালো,পলাশ।
পলাশঃ হুমম,বল কি হয়েছে।
আমিঃ আজ আমাদের আড্ডা খানায় আসলিনা কেন?মনে হয় অনেক ব্যবস্থ?
পলাশঃ আর বলিস না ভাই,আম্মুর একটা কাজে বাসায় আটকা পড়ে গিয়েছি তাই আজ আর আসা হবে না।
✪✪✪✪✪✪✪✪✪✪ চলবে ✪✪✪✪✪✪✪✪✪✪
No comments