আত্নার মুক্তি পার্ট-১
গল্পঃ আত্মার মুক্তি
লেখকঃনাজাত রহমান
এক.
চায়ে এত চিনি দেওয়ার কারন বুঝে উঠতে পারলাম না। আমার এভাবেই ডায়াবেটিস আছে। রফিক,এই রফিক!
--জ্বি, স্যার।
-- চায়ে এত চিনি দেওয়ার কারন কি?
-- আজ্ঞে স্যার আমার শইলডা বেশি ভালা না।
-- কি হয়েছে?
-- জানি না স্যার।তয় শইলডা ম্যাচম্যাচ করে।
-- ছুটি নিবে?
--না স্যার।
-- আচ্ছা রান্না করে বিশ্রাম নেও। ঘুমিয়ে পড়ো।
--আচ্ছা সাহেব।
আমার নাম রাতুল হাসান৷ একটা গারমেন্টস এর মালিক।আর মাঝে মাঝে একটু ঘোরাঘুরি করি। মাঝেমধ্যে বললে ভুল হবে।মাসে ১৫ দিনই নানা জায়গা ঘুরে বেড়াই। কাজের ছেলে রফিক আর একটা ক্যামেরা আমার ঘুরাঘুরির সাথী। সাথে আমার প্রিয় জিপটাও আছে। আজ একটা জমিদার বাড়ি দেখলাম ইন্টারনেটে। খারাপ না।গিয়ে থাকবো ভাবছি।আমার স্ত্রীর গত বছর বজ্রপাতে মৃত্যু হয়েছে।
এরপর আর বিয়ে করিনি।একাই বেশ ভালোই চলছে। আমার বাচ্চাকাচ্চা নেই। রাতে খাবার পরে এক কাপ কড়া করে চা খাই।আজও তার ব্যতিক্রম হলো না। তবে আজ চিনির মাত্রা বেশি।খাটের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে পাইচারি করছি। আমরা যে জমিদার বাড়ি যাব সেটি ভৌতিক। গুগলে বেশি ইনফরমেশন পেলাম না।উত্তেজিত লাগছে নিজেকে। গল্পের বই পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে গেলাম।
দুই.
সকাল ৮টাঃ
--স্যার, আপনার চা।
--তোমার শরীর কেমন?
-- ভালো না স্যার।কাল রাইতে জ্বর আইছিলো।
-- রফিক,শুনো এবার আমি ঠিক করেছি জমিদার বাড়ি ঘুরতে যাবো।একটা ব্যাপার হলো এবার তুমি যাবে না।
-- ক্যান, স্যার?
--তুমি অসুস্থ।
--স্যার?
--তুমি জানোই তো আমি এক কথার মানুষ। না বলেছি তো না।
--কবে যাচ্ছেন?
-- দেখি।
--রফিক শুনো আজ দুপুরে কিন্তু রুইমাছ রান্না করো।
রফিকের উত্তর পেলাম না। বেচারা মন খারাপ করেছে।কিন্তু তার তো শরীর খারাপ।
তিন.
নেইলকাটার দিয়ে নখ কেটেও সমান করতে পারছি না। এক না এক দিক বড় ছোট হচ্ছেই। রাতে খাবারের জন্ন্যে ডাকলো রফিক। আমি বলি,
--কাল ভোরের দিকে গাড়িটা বের করো।
–কালই যাবেন জমিদার বাড়িতে।
-- হ্যাঁ,কাল।
-- আচ্ছা সাহেব।
চার.
আহ! কি মিস্টি বাতাস। আসলে যান্ত্রিক জীবন আর ভালো লাগে না। মানুষ এর মানুষিকতা পরিবর্তনে ভ্রমণ এর বিকল্প নেই। আর বেশিক্ষণ নেই শিলিগুড়ির জমিদার বাড়ি যেতে। জিপিএস বলছে সামনের রাস্তায় বাড়িটি। লক্ষ্য করলাম কালচে রঙ এর একটি বিশাল বাড়ি। গাড়িটা রাস্তার পাশে রেখে আসলাম। বাড়ির গেট ধাক্কা দিলাম।ইসসস!কি শব্দ কান ধরে গেলো। বাড়িটা কিরকম যেন লাগছে।আচ্ছা এবার একা এসে ভুল করলাম নাতো।হঠাৎ পিছন দিয়ে কেউ বললো,"সাহেব আপনি কে? "
আমি রীতিমতো লাফিয়ে উঠলাম ।
আমি বললাম,"আমি রাতুল হাসান।এই জমিদার বাড়িতে কিছু দিন থাকবো।"
সে বললো,"হ্যাঁ, তা থাকতে পারেন কিন্তু । "
আমি বললাম "কিন্তু কি?আচ্ছা আপনি কে?"
সে বললো, "সাহেব আমি এই বাড়ির দেখাশোনা করি। "
আমি বলি শুনুন এখানে আমি তিন থেকে চারদিন থাকবো!"
এটা বলে তার হাতে ৫০০০ টাকা গুজে দিলাম ।
সেই লোকটি হা করে তাকিয়ে আছে। হয়তো ভাবছে এত টাকা দিলো কেন?
--আচ্ছা আপনার নাম কি?
--আজ্ঞে রামু, আমার নাম রামু।
-- রামু শুনো আমাকে এই বাড়িটা সম্পর্কে কিছু বলো। কবে,কিভাবে কারা বানিয়েছেন বাড়িটি। দুপুরে খাবারের পরে রামুর সাথে কথা বলে যা বুঝলাম, এই বাড়িটিতে জমিদারের নাতিপুতিরা কিছু নর্তকীদের হত্যা করেন।রামু এখানে থাকেন না।আমি আসাতে রামু এখন থেকে আসবে রান্নাবান্না করে দিয়ে চলে যাবে।রামু আমাকে একটা অনুরোধ করে আমি যেন তাকে রাতে থাকতে না বলি। রামু বলে বাবু আমার মেয়েটা একা থাকে আর তার মা নেই। আমার কিছুটা মায়া হলো।আমিও তার কথায় রাজি হলাম।
পাচ.
সন্ধায় রামু এসে আমাকে রাতের খাবার তৈরি করে দিলো। সাথে কিছু মোমবাতি আর ম্যাচ দিয়ে গেল। রামু বলে,
-- সাহেব টেবিলে রাতের খাবার আছে খেয়ে নিবেন। আর একটু সাবধানে থাকবেন।
-- কেন? সাবধানে থাকতে হবে কেন?
-- তেমন কিছু না সাহেব। আপনার জন্ন্যে এটা নতুন জায়গা একটু সমস্যা হলেও হতে পারে।আর সাহেব রাতে জানালা লাগিয়ে রাখবেন।কেউ ডাকাডাকি করলে সারা দিবেন না।আমি একবারে সকালে আসবো।
এই কথা বলে বেড়িয়ে গেল রামু।আমি ছোট থেকেই একটু ভীত।এগুলা কি বলে গেল রামু।
ছয়.
আজ রাতের খাবারটা বেশ জমপেশ হয়েছে।রামু ছেলে হয়েও এত ভালো রান্না করে জানা ছিল না।
ছেলেরা কি আসলেই এত ভালো রান্না করতে পারে!
প্রতিদিন এর অভ্যাস ব্যতিক্রম হলো না আজও। হাতে চায়ের কাপ।রামু চা বেশ বানায়। রামুতো দেখছি সব দিকে পারদর্শী।
সাত.
ফুলের সুভাষে মন ছুয়ে যায়। আহ! কি পবিত্র এই সুভাষ। জমিদার বাড়ির পেছনের বাগানে বেলি ফুল রয়েছে । জানালাটা খুলে দিলাম। কি ফুরফুরে বাতাস।মনে হয় স্বর্গে আছি!চোখ এর পাতার ভার সামলানোর মতো শক্তি পাচ্ছিনা। ঘুম এলেতো মন্দ হয় না।আর চোখের পাতা খুলে রাখার ব্যর্থ চেষ্টা করলাম না।
আট.
একরকম লাফিয়ে উঠলাম ঘুম থেকে। বাহিরে খুব বৃষ্টি আর ঘন ঘন বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। যেন বৃষ্টি আর বিদ্যুৎ চমকানো একে অপরের পরিপূরক।বাহিরে কেউ ঝাড়ু দিচ্ছে। এই জমিদার বাড়িতে আমি আর রামু ব্যতীত কেউ নেই।রামু রাতে থাকেনা।বেশ পুরাতন হিন্দু বাড়ি।জানালার শিক ভাঙা।জানালার ফাকা দিয়ে তাকিয়ে দেখি কালো রেইনকোট পড়া একটি লোক ঝাড়ু দিচ্ছে।করপোরেশন এর লোক মনে হয়। তবে এত রাতে কি করপোরেশন এর লোক আসে নাকি! ঘড়িতে দেখি রাত ৩ঃ৩২ বাজে।খাট থেকে নামলাম। ছোটবেলায় ভাবতাম রাতে খাট থেকে নামলে, খাটের নিচ থেকে এক জোড়া হাত এসে টান দিবে।না,তেমন কিছুই হলো না আজ।বুকে সাহস নিয়ে এগুলাম। বাড়ির বাহিরে মোটামুটি বৃষ্টি।দেখলাম এক কালো শাড়ি পড়া একটি মেয়ে ঝাড়ু দিয়ে পাতা সরাচ্ছে। আমি দু একবার বললাম, "এই মেয়ে এত রাতে এখানে কি করো?" অপর পাশ থেকে উত্তর আসলো না।মোবাইল এর টর্চ অন করে মেয়েটার দিকে ধরলাম। মেয়েটি পালিয়ে গেল।খালি চোখে তাকে আর দেখতে পেলাম না।অদৃশ্য হয়ে গেল অদৃশ্য। জমিদার বাড়িতে ঢুকলাম। সিড়ি দিয়ে উপরের ঘরে যাবো ঠিক সেই সময়ে নুপুর পরে হাটার শব্দ। গা হিম হয়ে আসলো।বিভিন্ন ভৌতিক সিরিয়াল বা সিনেমায় যেমনটি হয় আজ আমার সাথে তেমনি হচ্ছে।শব্দটা আসছে চিলেকোঠার ঘর থেকে।আস্তে আস্তে শব্দ বেড়েই চলেছে। এক পা,দু পা করে এগুতে লাগলাম। চিলেকোঠার সামনে গিয়ে দাড়াতেই শব্দ থেমে গেল।আলতো করে ধাক্কা দিতেই দরজা খুলে গেল।কতগুলো বাদুড় উড়ে গেল মাথার উপর দিয়ে। একটা কপালে ধাক্কা খেয়েছিল।কি বাজে গন্ধ!সামনে এগুতেই মুখে মাকড়সার জালে জড়িয়ে গেলাম।চিলেকোঠার কামড়াতে ঢুকে যা দেখলাম, কামড়ার এক কোনায় মোমবাতি জ্বলছে। সদ্য জ্বালিয়ে দিয়েছে কেউ।নিচে পাটি বিছানো। বাদ্যযন্ত্র দিয়ে ভরা ঘর।সেই পুরানো দিনের রাজারা যেভাবে নর্তকীদের নাচ দেখতেন ঠিক তেমন।মনে হচ্ছে গানবাজনা চলছিলো আমি এসে তাদের সমস্যা করে দিলাম। ঠিক তখনি মনে হলো রামু বলেছিল এই বাড়িতে রাজার নাতিপুতিরা নর্তকীদের হত্যা করে।না, না আর এক মুহুর্তে এখানে থাকা যাবে না।আমার দৃষ্টি ভ্রম না হলে এখানে কিছুই স্বাভাবিক হচ্ছেনা। কামড়া থেকে বেরিয়ে যাব ঠিক তখনি দরজাটি লেগে গেল। শত চেষ্টা করে পারলাম না দরজা খুলতে।বাহিরে থেকে কেউ লাগিয়ে দিয়েছে।মোমবাতি আলো তার ভার ধরে রাখতে পারছে না মনে হয়। নিভু, নিভু প্রায়।আমি মাটিতে বসে পরলাম। আচ্ছা এগুলো আমার দৃষ্টি ভ্রম নাতো।কিছুক্ষণ পর গায়ের সাথে কেউ গা মিলিয়ে বসলো আমার সাথে। খুব ঠান্ডা আসছে তার গা থেকে।আমি তাকানোর দুঃসাহসিকতা দেখাই নি।চোখ বন্ধ করে ফেললাম। বুকের ব্যথাটা বেড়ে গেল। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। দুই তিন মিনিট পরে চোখ খুললাম। আমি মাটিতে বসে ছিলাম। কেউ আমার পা ধরে এমন এক হেচকা টান দিলো। আমার মাথাটি দেয়ালের সাথে লাগলো। খুব ব্যথা হচ্ছে। মনে হয় জ্ঞান হারাবো। ঠিক তখনি দেখলাম আমার সামনে সেই কালো শাড়ি পড়া মেয়েটি দাড়িয়ে আছে। ররক্তাক্ত মুখ, গালে কাটা দাগ। পার্থক্য হলো এখন নর্তকী সাজে কালো শাড়ি পড়া।মেয়েটি হাসছে।কি ভয়ংকর হাসি!বুকে প্রচুর চাপ অনুভব হচ্ছে। সকালে আমি নিজেকে................
(চলবে)
পরের পর্বে রহস্যের জোট খুলবে।গঠনমূলক কমেন্ট পেলে দ্বিতীয় পর্ব কাল দিবো।
No comments