তোমার পিছু ছাড়বো না পার্ট-২
গল্পঃ #তোমার_পিছু_ছাড়বো_না
লেখকঃ #রাজু
পার্টঃ #২
✪✪✪✪✪✪ ১ম পর্বের পর থেকে ✪✪✪✪✪✪✪
✪✪✪✪✪✪✪✪✪ বর্তমানে ✪✪✪✪✪✪✪✪✪✪
আপনাদের সাথে কথা বলতে বলতে বাসায় চলে আসলাম।ফ্রেশ হয়ে এসে ড্রইংরুমে বসলাম।
আমিঃ আম্মু খুদাহ লেগেছে কিছু নাস্তা দাওতো!(চেচিয়ে)
আম্মুঃ সারাক্ষণ টোটোকোম্পানির মতো ঘুরে বেড়ানো আর ষাড়ের মতো চেচানো ছাড়া কি আর কোনো কাজ নেই তোর।
আমিঃ আমি জানি তুমি এগুলো মন থেকে বলছো না।তাই তোমার কথায় আমার কিছু যায় আসে না।
আম্মুঃ তোকে নিয়ে আর পারা যাবে না।বস তোর জন্য নাস্তা নিয়ে আসতেছি।
আমিঃ হুমমম,তারাতাড়ি নিয়ে আসো না।
আম্মু গিয়েছে আমার জন্য নাস্তা আনতে,তাই টিভিটা চালাম।আমার আবার সিনচ্যান কার্টুন দেখতে ভালো লাগে।তাই হাঙ্গামা চ্যালেনে দিয়ে কার্টুন দেখতে লাগলাম।কিছুক্ষণ পর আম্মু আসলো।
আম্মুঃ এইনে তোর ফ্যাভারেট!মচমচে পাকোড়া।
আমিঃ ধন্যবাদ আম্মু!সিনচ্যান কার্টুন সাথে পাকোড়া আহ্ মজাই আলাদা।
আম্মুঃ এতো বড় হয়ে গিয়েছিস দু'দিন পর ঘরে বউ আসবে।কিন্তু এখনও বাচ্চাদের মতো কার্টুন দেখিস।
আমিঃ তুমি জানো না আম্মু,কার্টুন দেখবে তাহলে মন ভালো থাকবে।
আম্মুঃ থাক!তোর আর উপদেশ দিতে হবে না আমাকে।
আমিঃ গরিবের কথা জোটা হলে লাগে মেঠা।
আম্মুর সাথে আরো কিছুক্ষণ কথা বলে নাস্তা করা শেষ হলে।বাসা থেকে বেরিয়ে আসি আড্ডা দেওয়ার জন্য।আড্ডা খানায় এসে দেখি নাইম আর সিয়াম আগে থেকেই বসে আছে।তাই আমিও গিয়ে তাদের মাঝে যোগদান করলাম।
আমিঃ কি অবস্থা তোদের?(বসতে বসতে)
সিয়ামঃ আমরা ফাস্ট ক্লাস,তোর আর ভাবির কি অবস্থা?
আমিঃ আর বলিস না ভাই,এতোদিন ধরে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছি কিছু হয় না।কিন্তু আজ কিভাবে যেনো যেনে যায় আমি আসমাকে ফলো করছি।
নাইমঃ বলোস কি ভাই,তারপর কি হলো?
আমিঃ তারপর আর কি আমিও নাটক করতে লাগলাম যা থেকে মনে করে আমি তাকে ফলো করছি না।কিন্তু না তা হয়নি আমার সব নাটক আসমার কাছে ধরা পড়ে যায়।তাও বলে সে নাকি লক্ষ করেছে আমি তাকে প্রায় এক মাস যাবত ফলো করছি।
সিয়ামঃ তারপর!
আমিঃ সব কিছু যেহেতু জেনেই গিয়েছে তাই আর থেমে থাকলাম না।আমিও সব কিছু বলে দিয়েছি ফাস্ট টু লাস্ট।তার ব্যাপারে কি কি জানা হয়ে গিয়েছে তাও বলে দিলাম।
নাইমঃ তো এখন কি ভাবিও তোকে ভালোবাসে নাকি?(উত্সাহিত হয়ে)
আমিঃ আমার কি আর সেই কপাল আছে নাকি।আসমা বলে দিয়েছে আর যেনো কোনো দিন তার আশেপাশেও না যাই।তাহলে নাকি আমার জন্য ভালো হবে না।
সিয়ামঃ তাহলে এখন কি করবি,সবকিছু ভুলে যাবি নাকি?
আমিঃ চুপ শালা,ভালোবেসেছি কি ভুলে যাওয়ার জন্য।এখন নতুন কোনো আইডিয়া বের কর।
নাইমঃ সবকিছু তো আমরাই করে দিলাম।এবার নিজে থেকে কিছু একটা কর।
আমিঃ এভাবে বলছিস কেন,তোরা তো আমার বেস্ট ফ্রেন্ড।আমার এই বিপদে যদি তোরা হেল্প না করিস তাহলে কিভাবে হবে।
নাইমঃ ভাব লাগিয়ে লাভ হবে না।নিজের কাজ নিজে করতে শিখেন।
আমিঃ আমারও সময় আসবে একদিন।তখন তোদের সব গুলোকে দেখে নিবো।
পলাশঃ কিসের দিন আসবে আর কাকে দেখে নিবি?(আমার পাশে বসতে বসতে)
আমিঃ কোথায় ছিলি এতোক্ষণ,দেরি করে আসলি যে।
পলাশঃ একটা কাজে আঁটকে গিয়ে ছিলাম তাই আসতে দেরি হয়ে গেলো।চাচা সবাইকে চা দিয়েন।
সিয়ামঃ আজ তুই খাওয়াবি নাকি?
পলাশঃ যে ভাবে বলছিস মনে হয় কোনো দিন আমি খাওয়াই নাই।
সিয়ামঃ রাগ করিস কেন?চায়ের সাথে একটা করে কেক দিতে বল না।(একটা হাসি দিয়ে)
পলাশঃ এমনিতেই মোটা হয়ে যাচ্ছিস তাই এখন থেকে কম কম খাওয়ার চেষ্টা কর।
সিয়ামঃ একটা কেক খাওয়াতে কিছু হবে না।তুই দিবে বল আর আমার চিন্তা করার জন্য ধন্যবাদ।
আমিঃ খাদক কোথাকার।খালি খাই খাই করে।
সিয়ামঃ আগে খেয়ে নেই তারপর যা ইচ্ছা বলতে থাকিস।
আড্ডা শেষে যখন সবাই যার যার বাসায় যাওয়ার জন্য দাঁড়ালাম তখন নাইম বললো।
নাইমঃ শুন রাজু,আগামীকাল তুই ভাবির ভার্সিটি ছুটির সময় আবার কথা বলে দেখতে পারিস।কারণ, হতে পারে তার বাসার নিচে দাঁড়িয়ে থাকিস, এটা তার কাছে ভালো লাগেনি।
আমিঃ হুমমম, ঠিক বলেছিস আগামীকাল আর বিকেলে যাবো না।ভার্সিটি ছুটির পর পরই দেখা করবো।আর আমিও জানতাম তুই আমাকে একটা না একটা বুদ্ধি দিবি।
নাইমঃ থাক আর পাম দিতে হবে না।
আমিঃ বুঝে গেলি তাহলে।(হাসতে হাসতে)
আর কথা না বাড়িয়ে বাসায় চলে আসলাম।ফ্রেশ হয়ে রুমে আসতেই ডিনার করার জন্য আম্মু ডেকে গেলো।তাই দেরি না করে খেতে চলে গেলাম।গিয়ে দেখি আব্বু,আম্মু বসে আছে।আমিও গিয়ে আমার চেয়ায় টেনে বসে পরি।আম্মু খাবার বেরে দিলো সবার।
আব্বুঃ পড়াশোনা কেমন চলছে???
আমিঃ আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভালো।(কেবলা মার্কা একটা হাসি দিয়ে)
আব্বুঃ লাস্ট কবে বাসায় পড়তে বসে ছিলে মনে আছে?
আমিঃ হি.হি.হি. এভাবে বলছো কেন?ফাইনাল এক্সামের তো এখনো সময় আছে।
আব্বুঃ এতোটাই যদি সময় থাকে,তাহলে অফিসে যেতে পারিস না।সারাক্ষণ ঘুরাফেরা না করে একটু সিরিয়াস হতে চেষ্টা কর।
আমিঃ......(চুপ করে আছি,এখন কথা না বলায় উত্তম)
আরো কিছু জ্ঞানী কথা শুনে,খাওয়া শেষ হলে আমার রুমে চলে আসি।তারপর কিছুক্ষণ ফেইসবুকে ঘুরাঘুরি করে ঘুমিয়ে যাই।
পরের দিন ভার্সিটি ছুটি হওয়ার পর নাইম বললো।
নাইমঃ গতকাল কি বলেছিলাম মনে আছে তো।
আমিঃ তা আবার বলতে হবে নাকি।কিন্তু এখনো তো আসমার ভার্সিটি থেকে বের হতে আরো আধাঘন্টার মতো বাকি আছে।
নাইমঃ গিয়ে দাঁড়িয়ে থাক না।
আমিঃ চুপ কর।মেয়েদের ভার্সিটির সামনে দাড়িয়ে থাকলে কেলানি খেতে হবে।(আসমা আমাদের ভার্সিটিতে পড়ে না,মেয়েদের ভার্সিটিতে পড়ে)
সিয়ামঃ হা.হা.হা. ঠিক বলেছিস।
আমিঃ চল চায়ের দোকানে গিয়ে একটু টাইমপাস করি।তার পর না হয় যাওয়া যাবে।
পলাশঃ আমার এখন বাসায় যেতে।
সিয়ামঃ আমারো।
আমিঃ তুইও কিছু বল।(নাইমকে বললাম)
নাইমঃ হুমম ঠিকি, এখন বাসায় যেতে হবে চায়ের দোকানে টাইমপাস করার সময় আমার নেই।
আমিঃ তোরা কেমন জানি হয়ে যাচ্ছিস।
নাইমঃ তুই থাক আমরা যাই।ঐ চল তোরা।
নাইম,সিয়াম ও পলাশ চলে গেলো।আমিও আর এখানে দাঁড়িয়ে থাকলাম না।ভাবলাম গতকাল তো হঠাৎ করে ধরা পড়ে ভালো করে প্রপোজ করা হয়নি,তাই আজ একটা গোলাপ ফুল দিয়ে প্রপোজ করবো।যেই ভাবা সেই কাজ,ভার্সিটির বাইরে থেকে একগুচ্ছ গোলাপ ফুল কিনে নিলাম।তারপর আস্তে আস্তে আমার নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে যাই।
সরাসরি ভার্সিটির সামনে না দাঁড়িয়ে কিছুটা দূরে দাড়ালাম।কিছুক্ষণ পরই আসমা বেরিয়ে আসলো।কিন্তু একা না সাথে তার বান্ধবীরাও আছে।তাই এখন আসমার সাথে কথা বলা যাবে না।আসমা ও তার বান্ধবীরা একসাথে হাঁটতে লাগলো,তাই আমিও রাস্তার বিপরীত দিক দিয়ে হাঁটতে লাগলাম। যা থেকে আসমাকে দেখাও যাবে এবং আসমার বান্ধবীদের কাছে ধরাও খেতে হবে না।
কিছুদূর যাওয়ার পর,এক এক করে আসমার সব বান্ধবী চলে গেল।আর আমার জন্যও রাস্তা ক্লিয়ার হয়ে গেলো।এখন আসমাকে দেখে মনে হচ্ছে রিকশা খুঁজছে কিন্তু আশে পাশে কোনো রিকশা নেই।আসমা রিকশার জন্য দাড়িয়ে আছে,কিন্তু আমি দাড়িয়ে না থেকে এক দৌড়ে রাস্তার মোড়ে চলে গেলাম।কারণ সেখানে অবশ্যই রিকশা পাওয়া যাবে।তারপর রিকশা নিয়ে এসে আসমাকে বলবো আমার সাথে চলে যেতে।দেখি এখন আমার প্লেন কাজ করে কি না।
বেশি দেরি করতে হয়নি,গিয়েই রিকশা পেয়ে গেলাম।তারপর আসমা যেখানে দাঁড়িয়ে আছে সেখানে রিকশা নিয়ে আসলাম এবং আসমার সামনে দাঁড় করালাম।
আমিঃ রিকশা পাচ্ছেন না বুঝি?চলেন আপনাকে বাসায় নামিয়ে দেই।(রিকশায় বসে)
আসমাঃ আপনাকে না বলে দিয়েছি আমার আশেপাশে না আসতে।(চোখ রাঙিয়ে)
আমিঃ আমি তো আপনার কাছে আসিনি।দেখলাম রিকশার জন্য দাড়িয়ে আছেন তাই হেল্প করতে চাইলাম।
আসমাঃ আমি কি আপনার কাছে হেল্প চেয়েছি নাকি।যেখানে যাচ্ছে চলে যান,আমি রিকশা নিয়ে যেতে পারবো।
আমিঃ শুনেন আমি একজন দেশের সচেতন নাগরিক।তাই আপনাকে কোনো ভাবেই একা ফেলে যেতে পারি না।
আসমাঃ ভাব দেখানো বন্ধ করেন।আমি হেঁটে বাসায় যাবো তারপরও আপনার সাথে যাবো না।
আমিঃ আমি থাকতে আপনার এতো কষ্ট,তা কিন্তু আমি সজ্জ করবো না।
কে শুনে কার কথা,আসমা হাঁটা শুরু করলো।তার মানে আমার প্লেন ফেল।এখন প্লেন বি(B)কাজে লাগাতে হবে।আমিও রিকশা থেকে নেমে গেলাম।ভাড়া মিটিয়ে,এক দৌড়ে আসমার কাছে আছে আসলাম।তারপর কোনো কথা না বলে আসমার সাথে হাঁটতে লাগলাম।
৩,৪ মিনিট এক সাথে হাঁটার পর।।।
আসমাঃ আপনি আমার সাথে সাথে কেন আসছে?(কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে)
আমিঃ আমি আপনার সাথে সাথে কেন যাবো,আমার গন্তব্য এই রাস্তা দিয়েই।
আসমাঃ আপনি না রিকশা দিয়ে যাচ্ছিলেন?(চোখ গুলো ছোট করে)
আমিঃ আম্মু বলেছে হাটলে শরীর সুস্থ থাকে।তাই ভাবলাম এখন হেঁটেই যাবো।
আসমাঃ আপনি কি আমাকে পাগল ভাবেছেন,যে যাই বলবেন তাই বিশ্বাস করবো।
আমিঃ পাগল ভাবতে যাবো কেন?আমি তো তোমাকে আমার রানী ভাবি।(বিরবির করে)
আসমাঃ আপনাকে না বলেছি,আমার সামনে স্পষ্ট করে কথা বলবেন তাহলে বিরবির করে কি বলছেন।
আমিঃ কই আমি তো কিছু বলিনি।
আসমাঃ ঐ আপনার হাত পিছনে কেন?কি লুকিয়ে রেখেছেন,হাত সামনে আনেন।
আমিঃ কই কিছু নেই তো।(নড়েচড়ে দাঁড়িয়ে)
আসমাঃ আপনি কথায় কথায় মিথ্যে বলেন কেন?(ধমক দিয়ে)
আমিঃ আসলে হয়েছে কি! I love You, আমি তোমাকে ভালোবাসি।কথা দিচ্ছি কোনো দিন কষ্ট পেতে দিবো না।(আসমার সামনে হাটু গেরে বসে,গোলাপ ফুল গুলো সামনে ধরে)
আসমাঃ রাস্তার মাঝে এইসব কি করছেন।আর আপনাকে না গতকাল বলে দিয়েছি,আমি আপনাকে ভালোবাসি না।(হাত থেকে ফুল গুলো নিয়ে দূরে ফেলে দিলো)
✪✪✪✪✪✪✪✪✪✪ চলবে ✪✪✪✪✪✪✪✪✪✪
No comments