গল্পঃ #গুন্ডি_মেয়ে


লেখকঃ #রাজু (#Raju)


পার্টঃ ১



প্রথমেই আমার পরিচয় দিয়ে নিই।আমি আযহারুল ইসলাম রাজু(এটা আমার রিয়াল নাম)সবাই রাজু বলেই ডাকে।, অর্নাস ফাইনাল ইয়ারের ছাত্র। বাবা, মায়ের একমাত্র সন্তান।আমার  আর কোনো ভাই, বোন নেই। বাবা সরকারি কর্মকর্তা এবং মা হলো গৃহিণী। আমরা মধ্যবিত্ত হলেও আমাদের পরিবার মহান আল্লাহর রহমতে অনেক সুখী। আমার বাবা,মা আমার সাথে অনেক ফ্রী। 


বাবার বদলির কারণে নতুন এক শহরে এসেছি। তাই এইখান কার একটি ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছি।আজ আমার প্রথম ক্লাস।তাই একটু আগেই ভার্সিটির জন্য রওনা দিয়েছে। ভার্সিটি আমাদের বাসা থেকে বেশি দূরে না। যেমন ধরেন হেটে আসলে ১০-১৫ মিনিট লাগে।তাই হেটেই আসছি।


ভার্সিটির সামনে চলে আসলাম।আজ প্রথম দিন তাই ক্যাম্পাসটা ভালো করে দেখছি।হঠাৎ চোখ গেল একটু দূরে। ক্যাম্পাসের সব ছাত্র-ছাত্রী এক জায়গায় জড়ো হয়েছে। ব্যাপার কি? দেখার জন্য এগিয়ে গেলাম।ছাত্র-ছাত্রীদের ভিড়ের মধ্য দিয়ে ভিতরে গেলাম।দেখার জন্য কি হচ্ছে। 


ভিতরে যা দেখলাম।তার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।দেখেতো আমার কপাল বেয়ে ঘাম পরছে।আর ভিতরে দেখলাম তা হলো।একটি মেয়ে তিন, তিনটে ছেলেকে আচ্ছা মতো মারছে।মেয়ের হাতে হকিস্টিক, তা দিয়ে ছেলে গুলোকে উত্তম মাধ্যম দিয়ে।চলেছে। 


মনে মনে ভাবছি।আল্লাহ তুমি আমাকে কোথায় নিয়ে এলে।ভার্সিটির প্রথম দিনই মারামারি দেখছি।তাও আবার একজন মেয়ে মারছে তিনটি ছেলেকে।আমিতো ভেয়ে শেষ। তাই তারাতাড়ি করে সেখান থেকে চলে আসলাম।


চলে গেলাম ভার্সিটির প্রধানের কাছে।রুমের বাইরে থেকে সালাম দিলাম।


আমিঃ আসসালামু-য়ালাইকুম স্যার!আসতে পারি?


স্যারঃ ওয়ালাইকুম সালাম।হুমমম ভিতরে আসো।


আমিঃ কেমন আছেন স্যার?


স্যারঃ আলহামদুলিল্লাহ ভালো। তুমি কেমন আছো?আর তোমাকে তো এই ভার্সিটিতে এর আগে কখনো দেখিনি।!


আমিঃ আলহামদুলিল্লাহ ভালো। স্যার আমি হলাম রাজু।নতুন ভর্তি হয়েছি অর্নাস ফাইনাল ইয়ারে।


স্যারঃ ওহ্হ। তুমি রাজু! তোমার সম্পর্কে অনেক কিছু শুনেছি। আর তোমার আব্বুর সাথে গতকাল কথা হয়েছে।মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করো আর কোনো সমস্যা হলে আমাকে বলবে।


আমিঃ ধন্যবাদ স্যার।


স্যারঃ এখন ক্লাসে যাও। কিছুক্ষণের মধ্যেই ক্লাস শুরু হবে।আমি তোমার ক্লাস টিচারকে বলে দিবো যেন তোমাকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়।


আমিঃ স্যার!ক্লাস রুম তো চিনি না।যদি বলে দিতেন।


স্যারঃ নতুন ভবনের ৩য় তলায় ২য় রুমটি।


আমিঃ ধন্যবাদ স্যার।এখন আসি।


আসার সময় ভেবেছিলাম, ক্যাম্পাসের গন্ডগোল সম্পর্কে স্যার কে বলবো।পরে আবার ভাবলাম আজই আমার এই ভার্সিটিতে প্রথম দিন,আর আজই যদি স্যার এর কাছে বিচার দেই। তাহলে বিষয়টা ভালো দেখায় না।


তাই স্যার এর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসলাম ঠিকানা মতো।ক্লাস রুমে এসে ভাবছি কোথায় বসবো।দেখলাম একটি ছেলে একা বসে আসে।দেখে মনে হচ্ছে ছেলেটি সুজা সাজা হবে।তাই গিয়ে ছেলেটার পাশে বসলাম।


আমিঃ হ্যালো!আমি রাজু(ছেলেটার দিকে হাত বাড়িয়ে)


ছেলেটাঃ হ্যালো!আমি নাইম।তোমাকে দেখে নতুন মনে হচ্ছে। (দুজনে হাত মিলিয়ে? 


আমিঃ হুমমম, গহকালই ভর্তি হলাম।আর আজ ক্লাস করতে আসলাম।


নাইমঃ ওহ্হ। তাহলে আজ থেকে আমরা ফ্রেন্ড। 


আমিঃ ওকে!আজ থেকে আমরা ফ্রেন্ড। 


নাইমের সাথে কথা বলে বুঝতে পারলাম। নাইম খুবই মিশুক। যার জন্য অল্প সময়ের মধ্যেই আমরা বন্ধু হয়ে গেলাম।


কিছুক্ষণ পর ঘন্টা পরলো।সব ছেলে-মেয়েরা ক্লাসে  আসতে লাগলো।হঠাৎ আমার চোখ দরজার কাছে আঁটকে রইলো। কারণ ক্যাম্পাসে যে মেয়েটা ছেলেগুলে কে মারছিল। ওই মেয়েটা ক্লাসে প্রবেশ করলো।সাথে তার বান্ধবীরাও আছে।সবাই মেয়ে গুলো কে সাইড দিচ্ছে ভিতরে আসার জন্য। 


মেয়েগুলো ক্লাসের লাস্ট বেঞ্চে গিয়ে বসলো।কিছুক্ষণ পর ক্লাসে স্যার আসলো।সবাই দাড়িয়ে স্যারকে সালাম দিলাম। স্যার সালামের জবাব দিয়ে সবাইকে বসতে বললো। 


স্যারঃ রাজু নামে আজ নতুন কে এসেছে?


আমিঃ আসসালামু ওয়ালাইকুম স্যার। আমিই রাজু।(দাঁড়িয়ে পরিচয় দিলাম)


স্যারঃ এদিকে আসো।


আমিঃ জ্বি স্যার আসছি।(স্যার এর কাছে যেতে-যেতে)


স্যারঃ এ হলো রাজু, তোমাদের নতুন বন্ধু। খুবই মেধাবী স্টুডেন্ট। 


সবাইঃ হ্যালো।(সবাই একসাথে)


আমিঃ হ্যালো।


স্যারঃ যাও, নিজের জায়গায় গিয়ে বসো।


চলে আসলাম নিজের জায়গায়। এক এক করে ৩টি ক্লাস শেষ করলাম।তারপর টিফিন পিরিয়ড দেওয়া হলো।আমি আর নাইম গিয়ে কেন্টিনে বসলাম।দেখলাম গুন্ডি মেয়েগুলোও বসে আড্ডা দিচ্ছে।


নাইমঃ কি খাবি বল?(দুজন এতক্ষণে বেস্ট ফ্রেন্ডের মতো হয়ে গিয়েছি।তাই এখন দুজন দুজনকে তুই করেই বলি)


আমিঃ তোর যা খেতে ইচ্ছা অডার কর।আজ আমি বিল দিবো যা।তবে আগামীকাল কিন্তু তোর দিতে হবে হাহাহা।(বলেই দুজনেই হাসাহাসি করছি)


নাইম খাবার অডার করলো।আমরা দুজনে মিলে খেয়ে বিল দিয়ে চলে আসলাম। বাকি ক্লাস গুলো করতে।


যথাক্রমে বাকি ক্লাস গুলো শেষ করলাম।ক্লাস শেষে রুম থেকে বেড়িয়ে আসলাম আমি আর নাইম।দুজন ক্যাম্পানে হাঁটছি।হঠাৎ কিসের সাথে যেন আমার পা আঁটকে গেল।আমি নিজেকে না সামলাতে পেরে পরে গেলাম।


পরে অনুভব করলাম, আমি মাটিতে পরিনি কারো উপরে পরেছি।হঠাৎ কারো চিৎকার শুনতে পেলাম।আমি যার উপরে পরেছি সে চেচিয়ে উঠলো, গলার আওয়াজ শোনে বুঝলাম এটা মেয়ে।আমি তো সঙ্গে সঙ্গে উঠে দাঁড়ালাম। 


আমার সাথে সাথে মেয়েটিও উঠে দাঁড়ালো। যেই আমি মেয়েটিকে স্যারি বলতে যাবো, তখন তার মুখের দিকে তাকালাম। মেয়েকে দেখেতো আমার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গিয়েছে।


কারণ মেয়েটি আর কেউ না,সকালের গুন্ডি মেয়েটা।আল্লাহই যানে এই মেয়ে আমাকে কি করবে।মেয়েটি কিছু বলার আগেই।।।। 


আমিঃ স্যারি আপু! আমি জেনে-বুঝে আপনার উপরে পরিনি।!!!!


বলেই দিলাম এক দৌড়, আমাকে আর কে ধরে।এক দৌড়ে বাসার নিচে চলে আসলাম।বাসায় যাওয়ার আগে, আবার রাস্তায় আসলাম।চারিদিকে উঁকি দিয়ে দেখলাম।না মেয়েটি আমার পিছনে আসেনি।সুস্থির এক নিঃশ্বাস ছাড়লাম।


এই বারের মতো না হয় বেঁচে গেলাম। কিন্তু আগামীকাল আমার কি হবে। আল্লাহ আমাকে ঐ গুন্ডি মেয়ের হাত থেকে রক্ষা করো।বাসায় গিয়ে কলিংবেল বাজালাম। আম্মু এসে দরজা খুলে দিল। 


আম্মুঃ কিরে রাজু তোকে এমন দেখাচ্ছে কেন?


আমিঃ না আম্মু, কিছু হয়নি।দেখোনা রাস্তায় কি রৌদ তাই এমন লাগছে।


আম্মুঃ আচ্ছা এখন ভিতরে আস।


চলে গেলাম আমার রুমে, ব্যাগটা রেখে ভাতরুমে ডুকলাম।তারপর মাথার উপর ঝর্ণাটা ছেড়ে দিলাম।আমার মনে হচ্ছে এখনো আমার শরীর কাপছে। অনেকক্ষণ ধরে গোসল করে বেরিয়ে আসলাম।তারপর খাওয়া দাওয়া করে ঘুমানোর চেষ্টা করছি, কিন্তু চিন্তায় আমার ঘুম আসছে না।অনেক চেষ্টা করে ঘুমালাম।


ঘুম ভাঙ্গলো আম্মুর ডাকে।


আম্মুঃ আর কতো ঘুমাবি।এবার উঠে পর।


আমিঃ কয়টা বাজে, এখনি ডাকছো কেন???


আম্মুঃ ৫টা বাজে এখন ওঠ।


আমিঃ তো এতো ভোরে ডাকছো কেন?ভার্সিটিতো ১০ টায়।(ঘুমের ঘোরে)


আম্মুঃ এই তোর মাথা ঠিক আছে তো।নাকি পাগল টাগল হলি।


আমিঃ কেন কি হয়েছে???


আম্মুঃ এখন বিকাল ৫টা বাজে গাধা কোথাকার। 


কথা শুনিয়ে আম্মু চলে গেল।মাথার চুলগুলো চুলকচ্ছি আর ভাবছি।ঐ গুন্ডি মেয়ের কারণে মনে হয় আমি সত্যি সত্যি পাগল হয়ে যাবো।হাত-মুখ ধুয়ে হালকা-পাতলা নাস্তা করে নিলাম।তারপর বিকালের বাকি সময়টা ছাদে কাটিয়ে দিলাম।


সন্ধ্যার সময় পড়তে বসলাম।কিছুক্ষণ পর আব্বু আসলো অফিস থেকে। পড়া থেকে উঠে আব্বুর সাথে আড্ডা দিতে চলে আসলাম।


আব্বুঃ নতুন ভার্সিটির প্রথম দিন কেমন কাটলো।


আমিঃ হুমমম, ভালোই কেটেছে।(আব্বুর কথায় গুন্ডি মেয়ের কথাটা আবার মনে পরে গেল।)


আব্বুঃ কোনো সমস্যা হলে বলবে???


আমিঃ জ্বি আব্বু।।। 


আব্বুর সাথে আরো কিছুক্ষণ আড্ডা দিলাম।তারপর ডিনার করে আমার রুমে এসে শুয়ে পরলাম।ঘুমানোর আগে ফেইসবুক থেকে ঘুরে আসলাম।ফেইসবুকে কিছুক্ষণ থেকে ঘুমিয়ে গেলাম। 


ফজরের আযানের ধ্বনিতে আমার ঘুম ভাঙ্গলো। মনে মনে ভাবছি জীবনে কতোই না ভুল করেছি আর মহান আল্লাহর ইবাদতের কথা আর নাই বললাম।তাই এই ফজরের আযানের সময় প্রতিজ্ঞা করছি।যতো সমস্যাই হোক না কেন সালাত(নামাজ)ছাড়বো না।


তাই শুয়া থেকে উঠে পরলাম।ভাতরুমে গিয়ে ওযু করে।বাসা থেকে বেরিয়ে আসলাম মসজিদে যাবো।মসজিদ আমাদের বাসার কাছেই।সালাত(নামাজ)আদায় করে মসজিদ থেকে বের হলাম। 


আজকের ভোরটা আমার কাছে অন্য রকম লাগছে। আপনারাও ফজরের সালাত(নামাজ)শেষে রাস্তায় বের হয়ে দেখবেন।ভোরটা আপনার জীবনের সেরা সময় হবে।রাস্তায় কিছুক্ষণ হেঁটে বাসায় চলে আসলাম।


ভার্সিটির এখনো অনেক সময় বাকি তাই আবার ঘুমিয়ে গেলাম।আর ঘুম ভাঙ্গলো আম্মু ডাকে।ঘুম থেকে উঠে নাস্তা করলাম। এখন ভার্সিটি যাওয়ার হয়ে গিয়েছে। আমিতো ভয়ে এখনি ঘেমে একাকার। নতুন ভর্তি হয়েছি মিসও করা যাবে না।


শত চিন্তার অবসান ঘটিয়ে রেডি হলাম ভার্সিটির জন্য। আম্মুকে বলে চলে আসলাম। ভার্সিটির সাননে এসে দেখি গুন্ডি মেয়েটা ও তার বান্ধবীরা ভার্সিটির গেইটের সামনে বাইকে বসে আছে।ভাবছি বাসায় কি ফিরে যাবো নাকি ওমনি মনে হয় আমাকে দেখে ফেলেছে। 


গুন্ডি মেয়েঃ ওই এইদিকে আয়।(আমাকে দেখিয়ে)


✪✪✪✪✪✪✪✪✪✪চলবে✪✪✪✪✪✪✪✪✪✪✪


#বিঃদ্রঃ  আপনাদের সারা পেলে সামনে আগাবো।না হলে আবার অন্য কিছু চিন্তা করতে হবে।তাই কমেন্ট করে জানাবেন কেমন হয়েছে। কোনো ভুল হলে ক্ষমার চোখে দেখবেন। 


#stay_home_stay_safe

No comments

Powered by Blogger.