আত্নার মুক্তি পার্ট ২
গল্পঃ আত্মার মুক্তি
লেখকঃনাজাত রহমান
পর্ব-২
এই পর্বে নিজেকে রাতুল হাসান এর জায়গায় রেখে গল্পটি পড়ুন। মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
নয়.
সকালে নিজেকে নিজের কামড়াতে আবিষ্কার করলাম। রামু আগ্রহের চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
--কেমন বোধ হচ্ছে সাহেব?
-- ভালো।
--সাহেব আপনি চিলেকোঠার ঘরে কি করছিলেন? আমি সারা বাড়ি আপনাকে খুজে না পেয়ে, এখানে এলাম।
আমি চুপ করে রইলাম।
--আচ্ছা রামু একটা সিগারেট হবে?এক কাপ চা আর একটা সিগারেট দাও তো।
-- আজ্ঞে সাহেব আনছি। আমিতো কম দামিটা খাই আপনি খাবেন?
-- হ্যাঁ, দাও একটা।
রামু উঠে নিচের দিকে গেল। মাথার পিছনে প্রচুর ব্যথা হচ্ছে।মাথায় হাত দিয়ে দেখলাম ফুলে গিয়েছে। আমার একটি অভ্যাস রয়েছে। বাজে বলবো নাকি ভালো বুঝতে পারছি না।আমি প্রচুর ঘুমাই।একবার এক সন্ধায় ঘুমিয়ে পরের দিন সন্ধ্যায় উঠেছিলাম।কাজের ছেলে রফিক বার বার এসে নাকের সামনে হাত দিয়ে বুঝার চেষ্টা করতো। আমি কি মরে গেছি নাকি বেচে আছি সেটা দেখতো। আজ সেরকম কিছু একটা করার সিদ্ধান্ত নিলাম।রামুকে দিয়ে ঘুমের ঔষধ আনিয়ে নিলাম।আমি গতদিন জার্নি করাতে রাতে কি ভুলভাল দেখলাম। এই বুড়ো বয়সে ভুতের ভয় লোকে কি বলবে!দুপুরে ঘুমের ঔষধ খেয়ে ঘুমালাম উঠলাম সন্ধ্যায়।কি আজব ব্যাপার যেখানে ঘুমের ঔষধ ব্যতীত একদিন ঘুমিয়ে পার করি,আজ সেখানে ঘুমের ঔষধ খেয়ে মাত্র ৬ ঘন্টা ঘুমালাম!.ঘুম ভাঙতেই দেখি টেবিলে ফ্লাক্স। উঠে ফ্লাক্স টা খুলে দেখি চা।খুব গরম।রামু সম্ভবত করে দিয়ে চলে গেছে। চা ঢালার সময় লক্ষ্য করলাম তাজা রক্ত পরছে ফ্লাক্স থেকে। চোখ বন্ধ করে ফেললাম। পয়ত্রিশ সেকেন্ড পরে চোখ খুললাম।না কোথায় রক্ত! রক্ত নেই।বুঝতে পারলাম এখোনো আমি ক্লান্ত। খালি দৃষ্টি ভ্রম হচ্ছে। মানুষ হটাৎ অপ্রস্তুতকর কিছু দেখলে চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষন পরে খুললে সব ঠিক হয়ে যায়। তেমনি হলো।
দশ.
সেই ঘুম ভেঙেছে তো ভেঙেছে।আর চোখে ঘুম নেই।চোখের পাতার ভার অনুভব করছি না।ঘড়িতে রাত ১২ঃ৫৮। খাবার শেষ করলাম।আজ খাবারের তালিকায় ছিল মুড়িঘণ্ট, টাকি মাছের ঝোল।ভালোই লেগেছে খেতে।ধুপ করে আওয়াজ আসলো পাশের কামড়া থেকে। প্রথমে মনের ভুল ভাবলাম। সাথে অনেক গুলো লোকের কথা শুনতে পারলাম স্পষ্ট। বাংলায় অনুবাদ করলে তাদের কথাটা হবে অনেকটা এরকমঃ
"এ তো মারা গেছে এখন কি হবে।"আরেকজন বললো, "ওরে কাপড় দিয়ে পেচিয়ে রেখে চল পালাই।"আরেকজন বললো যা করার তারাতাড়ি করতে হবে।"
এগুলো শুনে খানিকটা সন্দেহ হলো।উঠে গেলাম পাশের কামড়ায়।বাহিরে হালকা বৃষ্টি হচ্ছে।পাশের কামড়ায় গিয়ে ধাক্কার মতো খেলাম। ভয় কি জিনিস তা টের পেলাম। শিড়দাড়া বেয়ে ঠান্ডা পদার্থের চলাচল অনুভব হলো। দেখলাম বারান্দার দরজা সোজাসুজি একটা লাশ লাল কাপড় দিয়ে মোড়ানো। আর বারান্দায় কোনো গ্রিল ছিলো না। এটা পুরনো জমিদার বাড়ি।চার, পাচজনকে দেখলাম বারান্দা দিয়ে লাফিয়ে চলে গেল। তারা অস্বাভাবিক লম্বা ছিল। আমি দ্রুত বারান্দায় গিয়ে নিচে তাকালাম কেউ নেই হালকা বৃষ্টি হচ্ছে।এবারো ভাবলাম দৃষ্টিভ্রম। পেছনে তাকিয়ে দেখি লাশটি আছে। চোখ বন্ধ করে খুললাম।এবার আর কাজ হলো না আগের পদ্ধতিতে। লাশটি লাশের জায়গায় আছে। খুব ভয়ে ভয়ে লাশের দিকে এগুচ্ছি। মুখ থেকে কাপড়টা সরিয়ে ভয় পাবার কথা কিংবা আৎকে উঠার কথা।কিন্তু কোনোটাই হলো না।আমি মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি।আমি চোখের সামনে কোনো পরি দেখলাম।এত সুন্দর মেয়ে আমি কখোনই দেখিনি। মেয়েটার গা থেকে কেমন একটু আলোর আভা বের হতে লাগলো। তার দিকে মন্ত্রমুগ্ধের মতো চেয়ে আছি।আমি তার গায়ে হাত দিতেই আমার আঙুলটি পচ করে ডেবে গেল।লাশটি পচে গিয়েছে। লাশটির চোখের দিকে তাকাতেই লাশটিও আমার দিকে তাকায়।দেখলাম চোখের মনি উল্টে গিয়েছে। আমি ছিটকে পড়ে গেলাম।বুকের ব্যথাটা বেড়ে গেলো। আর কতো বলবো এগুলো মনের ভুল!খুব জোরে বৃষ্টি শুরু হলো।ঘর ভিজে যাচ্ছে বৃষ্টির পানিতে।বারান্দার দরজাটা ভাঙা।সেখান দিয়ে পানি আসছে। আমি লাশটির পাচ হাত দুরে বসে আছি।লাশটির উপর পানি পরছে।ভিজে চুপসে গেছে।আমার খুব খারাপ লাগলো। যে মানুষটি জীবিত অবস্থায় ভিজলে আমরা তাকে সাহায্য করি আর তার আত্নার অবসান ঘটলেই অবহেলা করি।লাশ হলে কি হয়েছে! আমি ভয়ে ভয়ে লাশটির কাছে গেলাম।ভেবেছিলাম যে কামড়াতে থাকি তার খাটের নিচে লাশটি রাখবো। যে ভাবা সেই কাজ। লাশটিকে টেনে নিয়ে এলাম।সাথে সাথে দরজা জানালা লাগিয়ে দিলাম। খাটের এক কোনায় গুটিসুটি মেরে বসে রইলাম।ভোর হতে আর ২ ঘন্টা বাকি। ভাবতেই গা শিউরে ওঠে,এই জমিদার বাড়িতে আমি আর একটি লাশ আছি। সেটাও আবার একই কামড়ার খাটের নিচে।আমি বিধাতাকে অনবরত ডেকেই যাচ্ছি।সকালের আলো ফুটিয়ে দাও বিধাতা আলো ফুটিয়ে দাও!কিছুক্ষণ পরে খাটের নিচ থেকে বিকট হাসির শব্দ।আমি প্রায় কাদো কাদো অবস্থা।এবার আর রক্ষে নেই।সব দোষ আমার আমিই লাশটা ঘরে এনেছি। পরপর দুবার হাসির শব্দ পেলাম। হার্ট এত পাম্প হচ্ছে যেন এখনি ফেটে যাবে।আর কিছু মনে নেই।
এগারো.
ঘুম ভাঙে ভোর বেলা। নিজেকে বিছানায় পাই। সব আগের মতো। জানালা খুলে দিলাম।খাট থেকে নেমে নিচে দেখি লাশটি আগের জায়গায় আছে। আমি তাড়াতাড়ি করে বেড়িয়ে পরি পুলিশ স্টেশনের উদ্দেশ্যে।
বারো.
অনেক কষ্টে পুলিশ স্টেশন পেলাম। লোকজন কে জিজ্ঞাসা করতে করতে পেলাম। পরক্ষণেই মনে হলো গাড়িতে জিপিএস ছিলো।বোকামি আর সময় নষ্ট ছাড়া কিছুই না।
তেরো.
-স্যার?আমাকে সাহায্য করুন দয়া করে।
-কে আপনি? কি হয়েছে?
-স্যার পরিচয় পড়ে জানবেন। আমি সব ঘটনা খুলে বললাম।
-স্ট্রেঞ্জ।
-পাশের রুমে খুন। আপনি জানেন না।নাকি মেয়ে এনে ফুর্তি করে, খুন করে গল্প সাজাচ্ছেন।
আমার মনে চাইছিলো পুলিশ অফিসার এর গালে কষিয়ে এক চড় দেই। আমার চোখ আর দাত কিড়মিড় করা দেখে পুলিশ অফিসার বললো, "শান্ত হন।"আমি আপনার সাথে যাচ্ছি চলুন।" আমি তাকে গাড়ি করে নিয়ে এলাম।এসে দেখি রামু বাড়ির বাহিরে দাড়িয়ে আছে। কারণ তার কাছে চাবি নেই। চাবি আমার কাছে।আমি পুলিশ অফিসারকে নিয়ে ভেতরে ঢুকলাম। রামু একটা প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে গিয়েও করলো না।
--লাশ কোথায়, রাতুল সাহেব?
--এইত্তো স্যার উপরতলায়।
-- চলুন তারাতাড়ি।
উপরে আমার কামড়ায় খাটের নিচে তাকিয়ে দেখি........................
(চলবে)
পরের পর্বেই শেষ এই জমিদার বাড়ির ঘটনা। ভালো সাড়া পেলে কাল তৃতীয় পর্ব পোস্ট দিব।
No comments