তোমার পিছন ছারবো না পার্ট-১

 গল্পঃ #তোমার_পিছু_ছাড়বো_না


লেখকঃ #রাজু


পার্টঃ #১



আসমাঃ এই যে আপনাকেই বলছি,দেয়ালের পিছনে লুকিয়ে না থেকে এবার সামনে আসেন!


আমি না শুনার ভান করে এদিক ওদিক তাকাচ্ছি।


আসমাঃ ভালোই ভালো বলছি সামনে আসেন,না হলে আমি আসব।


আমিঃ তুমি কি আমাকে  ডাকছো?(পরিবেশ সুবিধার মনে হচ্ছে না।তাই আসমার সামনে চলে আসলাম)


আসমাঃ হ্যালো মি. আপনার সাহস তো কম না।আপনি কোন অধিকারে আমাকে তুমি করে ডাকছেন?(রাগি মোডে)


আমিঃ এখন নেই তো কি হয়েছে,কিছুক্ষণ পর তো হতে পারে।(বিরবির করে)


আসমাঃ বিরবির করে কি বলছেন।স্পষ্ট ভাবে কথা বলেন।আর আপনি আমাকে কতদিন ধরে ফলো করছেন?


আমিঃ কই আমিতো কাউকে ফলো করছি না।


আসমাঃ ঐ একদম মিথ্যা কথা বলবেন না।গত এক মাস যাবত দেখছি আপনি আমাকে ফলো করছেন।এখন সত্যি করে বলেন আপনার মতল কি?


আমিঃ তুমি স্যারি আপনি আমাকে ভুল বুঝছেন।


আসমাঃ আর একটা মিথ্যে কথা বললে চিৎকার করে লোক জওরো করে বলবো আপনি আমাকে ডিস্টার্ব করছেন।


আমিঃ আসলে আমি আপনাকে প্রথম দেখাতেই ভালোবেসে ফেলেছিলাম।তাই প্রতিদিন আপনাকে ফলো করি।(মাথা নিচু করে)


আসমাঃ কিহ! আপনি আমার সম্পর্কে কি জানেন যে প্রথম দেখাতেই ভালোবেসে ফেলেছেন।


আমিঃ আপনার নাম সাদিয়া উম্মে আসমা,আর্নাস সেকেন্ড ইয়ারের শিক্ষার্থী।বাবার নাম মোঃ আকবর আলী,একজন সৎ সরকারি কর্মকর্তা।মায়ের নাম আফরোজা বেগম একজন গৃহিণী।ছোট ভাইয়ের নাম আদনান,দশম শ্রেণিতে পড়ে।সবার নামের প্রথম অক্ষর "আ" দিয়ে শুরু যা আমার অনেক ভালো লেগেছে।(এক নাগাড়ে কথা গুলো বলে দিলাম)


আসমাঃ আপনার সাহস তো দেখি কম না।লুকিয়ে লুকিয়ে আমার সব ইনফরমেশন নিয়েছেন?আমি আপনার নামে মামলা করবো।


আমিঃ যাকে প্রথম দেখায় ভালোবেসে ফেলেছি তার ইনফরমেশন তো নিতেই হবে বলেন।তো বলেন বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে কবে আসবো।


আসমাঃ আপনার আত্মবিশ্বাস দেখে আমি অবাক হচ্ছি।ভালো করে শুনে রাখেন,এতো দিন ফলো করেছেন কিছু বলিনি,কিন্তু আজকের পর যেন আর কোনো দিন আমার  আশেপাশে না দেখি।তাহলে কিন্তু আপনার জন্য ভালো হবে না।(কথা গুলো বলে পাশ কেটে চলে গেল)


আসমা চলে যাচ্ছে আর আমি তার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি। রাগ দেখে আবার নতুন করে আসমার প্রেমে পড়ে গেলাম।আহ্ কি কাজল কালো হরিণী চোখ,খাড়া নাক সব মিলিয়ে আমার সপ্নের রানী।


তুমি যতোই বলো না কেন,আমি #তোমার_পিছু_ছাড়বো_না।দেখতে থাকো কি কি হয়।তোমাকে তো আমার রানী বানিয়ে ছাড়বো।


এখানে দাঁড়িয়ে থেকে আর লাভ নেই। তাই এখন বাসায় যেতে হবে।চলেন যেতে যেতে আমার পরিচয়টা দিয়ে দেই।


আমি আযহারুল ইসলাম রাজু,সবাই রাজু বলেই ডাকে।অর্নাস ফাইনাল ইয়ারের স্টুডেন্ট।পরিবার বলতে আব্বু,আম্মু ও তাদের একমাত্র ছেলে মানে আমি।আব্বুর নিজস্ব বিজনেস আছে আর আম্মু গৃহিণী।এতোক্ষণ যার সাথে কথা বলছিলাম সে হলো আসমা,যাকে এক ঝলক দেখাই ভালোবেসে ফেলেছি।


★চলেন আসমাকে প্রথম দেখার ঘটনাটা বলি।


সেদিন ছিলো রবিবার বিকাল ৫টা বেজে ২৩মিনিট।সব বন্ধুরা মিলে চায়ের দোকানে আড্ডা দিচ্ছিলাম।হঠাৎ চোখে পরলো একটি মেয়ে একজন অন্ধ লোককে রাস্তা পার করে দিচ্ছে।কেন জানি না মেয়েটির এই কাজটা আমার হৃদয়ে স্পর্শ করে।বলতে পারেন তাকে না দেখে তখনই ভালোবেসে ফেলি।


রাস্তা পার শেষে মেয়েটি অন্ধ লোকটিকে কি যেন বলছিলো ঠিক তখনই তার চেহারা দেখে পাই।কাজে এবং চেহারায় মিল আছে,মেয়েটির চেহারায় অনেক মায়া আছে।ঝটপট মোবাইল বের করে লুকিয়ে লুকিয়ে মেয়েটির কয়েকটি ছবি তুলে নিলাম।হঠাৎ নাইম(বন্ধু)ডাক দিলো।


নাইমঃ কিরে রাজু তুই আমার ছবি তুলছোস কেন?(ব্রু কুঁচকে)


নাইম আমার বিপরীত দিকে বসেছে তাই মনে করেছে আমি নাইমের ছবি তুলছি।


আমিঃ হাসালি আমাকে,যেই না চেহারা নিজেকে কোনোদিন আয়নায় দেখেছিস।তোর ছবি তুললে আমার মোবাইলও শরম পাইবো।(হাসতে হাসতে)


আমার কথা শুনে সিয়াম,পলাশ(বন্ধু) সবাই একসাথে হাসতে থাকে।


নাইমঃ ভালো হচ্ছে না কিন্তু,আমারও সময় আসবে  মামা।


আমিঃ আগে আসুক,সেদিন দেখে নিবো।


নাইমের সাথে কথা বলে রাস্তায় তাকিয়ে দেখি মেয়েটি আর নেই।মেজাজটা এতোটাই খারাপ হয়েছিল যে বলে বুঝাতে পারবো।কাউকে কিছু না বলে আড্ডা থেকে উঠে চলে আসলাম।তারপর রাস্তা চারপাশে অনেক খুঁজাখুঁজি করলাম।কিন্তু মেয়েটিকে আর কোথাও পেলাম না।মন খারাপ করে সেদিন বাসায় চলে আসি। 


জীবনে অনেক মেয়ে মানুষ দেখেছি এবং অনেক রূপবতীর প্রপোজালও ফিরিয়ে দিয়েছি।কিন্তু আজ যাকে দেখলাম সে আমার ঘুম কেঁড়ে নিয়েছে।সেদিন রাতে আর ঘুমাতে পারিনি শুধু মেয়েটির ছবির দিকে তাকিয়ে ছিলাম।


পর পর আরো দুইদিন যেখানে আড্ডা দিতাম তার আশেপাশে প্রচুর খুঁজেছি।কিন্তু মেয়েটির কোনো দেখা পাইনি।আর আমার অবস্থাও খারাপ হয়ে গিয়েছিলো মেয়েটিকে আবার দেখার জন্য।আমার গুনো ধর বন্ধুরা মনে হয় কিছু আন্দাজ করতে পেরেছে।পরের দিন ভার্সিটির ক্যাম্পাসে আড্ডা দেওয়ার সময়।


সিয়ামঃ বন্ধু তোর কি হয়েছে রে?২,৩ দিন ধরে দেখছি কি যেনো ভাবছিস।(আমাকে বললো)


আমিঃ আমার আর কি হবে।আমিতো আগের মতোই আছি।


পলাশঃ আমাদের যদি বন্ধু ভেবে থাকিস তাহলে বল তোর কি হয়েছে।


ভেবে দেখলাম এখন আমাকে একমাত্র আমার বন্ধুরাই হেল্প করতে পারে।আর আমার যে ভাবেই হোক সেই মেয়ের খোঁজ চাই।


নাইমঃ আবার কি ভাবছিস?(আমাকে নারা দিয়ে) 


আমিঃ তোদের হেল্প লাগবে আমার।


সিয়ামঃ এখন চালু বলে ফেল কি রকম হেল্প লাগবে।


আমিঃ ভালোবেসে ফেলেছি!প্রথম দেখাতেই একটি মেয়েকে ভালোবেসে ফেলেছি।


পলাশঃ এতো ভালো কথা!আর আমাদের ট্রিট দিবি কিন্তু।


আমিঃ আমার কথাটা আগে শুন।


সিয়ামঃ ঐ পলাশ চুপ কর।রাজু তুই বল।


আমিঃ আসলে হয়েছে কি.......(তারপর বন্ধুদের সব কিছু বুঝিয়ে বললাম)


নাইমঃ ব্যাপারটা খুবই জটিল।কিন্তু মেয়েটিকে মানে ভাবিকে খোঁজার জন্য তাকে আমাদের দেখার প্রয়োজন ছিলো।তোর কাছে কি কোনো ছবি আছে?


আমিঃ হুমমম,ঐসময় তুলে রেখেছিলাম।(ছবিটা তাদের দেখালাম)


পলাশঃ তোর পছন্দ আছে বলতে হবে।


নাইমঃ চিন্তা করিস না,আগামীকালের মধ্যে ভাবিকে খোঁজে বের করবো।(আত্মবিশ্বাস হয়ে)


আমিঃ সত্যি তো।


সিয়ামঃ ভাবির খোঁজ পেলে কিন্তু ট্রিট দিতে হবে।


আমিঃ তোরা যা খেতে চাস সব খাওয়াবো।আগে তোদের ভাবিকে খোঁজে দে।


নাইমঃ বললাম তো চিন্তা না করতে।


পরের দিন বিকালে আড্ডা দিতে আবার চায়ের দোকানে বসলাম।


আমিঃ কিরে ভাই কোনো খোঁজ খবর পেয়েছিস নাকি?


নাইমঃ এখানে বসে থাকতে থাকতে আর ভালো লাগছে না।চল একটু হেঁটে আসি ভালো লাগবে।(কথা ঘুরিয়ে)


আমার যেতে মন না চাইলেও জোর করে নিয়ে যায়।হাঁটতে হাঁটতে আমাদের এলাকা থেকে বেরিয়ে পাশের এলাকায় নিয়ে গেলো।


নাইমঃ চল ঐ দোকানে গিয়ে বসি।(একটা চায়ের দোকান দেখিয়ে)


সিয়ামঃ হুমম,চল।


আমরা গিয়ে দোকানে বসলাম।নাইম চা অডার দিলো।চা খাওয়ার এক পর্যায়ে আবার সেই মেয়েটিকে দেখলাম।


আমিঃ নাইম দেখ তোর ভাবি যাচ্ছে।(তারাহুরো করে বসা থেকে উঠে)


নাইমঃ হুমম জানি,তার জন্যই তোরে এখানে নিয়ে আসলাম।


আমিঃ চল না ভাই কথা বলে আসি।(নাইমের হাত ধরে)


নাইমঃ চুপ,রাস্তার মধ্যে একটা মেয়েকে এভাবে দাঁড় করিয়ে কথা বলা ভালো দেখায় না।তার চেয়ে দেখ কোন বাড়িতে থাকে।


পলাশঃ নাইম ঠিক বলেছে,বেশি উতালপাতাল করিস না।একটু সময় লাগিয়ে কাজ কর দেখবি ভালো কিছু হবে।


দোকান থেকেই দেখা যাচ্ছে একটা বাড়িতে চলে গেল।যথা সম্ভব এটাই ঐ মেয়েদের বাড়ি।


আমিঃ আচ্ছা নাইম তুই কি করে বুঝলি এই মেয়ে এখানে থাকে?


নাইমঃ তুই ভুলে গিয়েছোস আমিও এই এলাকায় থাকি,তাই খোঁজে বের করতে বেশি কষ্ট করতে হয়নি।


আমিঃ তার নাম কি?কি করে?


নাইমঃ আর কিছুদিন সময়দে সব কিছু বের করে নিবো।


আমিঃ ধন্যবাদ বন্ধু।(নাইমের হাত ধরে)


সিয়ামঃ ধন্যবাদ দিয়ে কাজ হবে না।তুই বলেছিলি ভাবিকে খোঁজে দিলে আমরা যা খেতে চাইবো তাই খাওয়াবি।


আমিঃ এখনো কথাই বলতে পারিনি,আগে কথা হোক তারপর না হয় খাওয়াবো।


সিয়ামঃ এমন অভিশাপ দিবো না,সাত জন্মেও ভাবিকে পাবি না।তাই এখন ভালো কিছু খেতেদে।


আমিঃ আরে ভাই সিরিয়াস নিতেছস কেন,আমি তো মজা করছিলাম।চল আজ তদের রেস্টুরেন্টে নিয়ে খাওয়াবো।


সিয়ামঃ এইতো লাইনে আসছো।


তারপর সবাই মিলে খাওয়া দাওয়া করলাম।তবে আজ অনেক ভালো লাগছে কারণ এখন জানতে পেরেছি ঐ মেয়ের বাসা কোথায়।এই সূত্র ধরে অনেক কিছু জানা যাবে।


আরো তিনদিন পর জানতে পারলাম মেয়েটির নাম হলো সাদিয়া উম্মে আসমা,অর্নাস সেকেন্ড ইয়ারের শিক্ষার্থী।এরপর থেকে শুরু হয় আসমাকে ফলো করা মানে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখা।এখন আসমাকে না দেখলে রাতের ঘুম হারাম হয়ে যায় আমার।


আসমার পরিবারের সম্পূর্ণ ইনফরমেশন বের  করতে প্রায় ২০ থেকে ২৫ দিন গেলে যায়।আর আজ ৩৭তম দিনে এসে আসমার কাছে ধরা পড়ে যাই লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতে গিয়ে।তারপর কি কি হলো আপনারা তো দেখেছেন।


✪✪✪✪✪✪✪✪✪✪ চলবে ✪✪✪✪✪✪✪✪✪✪

1 comment:

  1. নতুন নতুন ভালোবাসার গল্প কবিতা পড়তে ও দেখতে আমাদের সাইটে ভিজিট করুন
    bdgolpo.xyz

    ReplyDelete

Powered by Blogger.